৬. বঙ্গোপসাগর ও এর বেসিন এলাকাগুলোর সাথে মানুষের রয়েছে প্রাণের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক
মৌলিক ধারণাগুলা
ক. কোটি মানুষের জীবন প্রভাবিত করে বঙ্গোপসাগর। বঙ্গোপসাগরকে দুনিয়ার মধ্যে খুবই বেশি উৎপাদনশীল একটা ইকোসিস্টেম (প্রথম শ্রেণি) হিসেবে বিবেচনা করা হয়; আসলে নদী থেকে বয়ে আসা পুষ্টি উপাদানের কারণেই এত উৎপাদনশীলতা। কোটি কোটি লোক এখানে তাদের প্রতিদিনের অন্ন যোগানো ও জীবিকার জন্য সরাসরি দরিয়ার ওপর নির্ভরশীল।
খ. দুনিয়ার জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ মানুষ, দুইশ কোটি লোকের বাস বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় দেশগুলোতে। দুনিয়ায় অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধায় থাকা লোকেদের একটা বিরাট অংশ এই সাগরপাড়ে বাস করেন, খুবই গরিব এই মানুষদের দৈনিক আয় দুই আমেরিকান ডলারের কম।
গ. বেসিন অঞ্চলসহ উপসাগরটির সব উপকূলীয় দেশগুলোর; বাংলাদেশ, ইনডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রিলংকা ও থাইল্যান্ডের লোকেদের নানা সিদ্ধান্ত ও কাজে সরাসরি প্রভাবিত হয় বঙ্গোপসাগর।
ঘ. বঙ্গোপসাগরে কীসব ফেলা হবে, আর সাগর থেকে কী তুলে নেয়া হবে; সেটা ঠিক হয় স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের আইন-কানুন ও সম্পদ ব্যবস্থাপনার নিয়ম অনুসারে। দেশগুলার যেকোনো প্রান্তে কিম্বা উপকূলে উন্নয়নমূলক এবং শিল্প সম্পর্কিত অথবা বাণিজ্যিক কাজেকামের থেকে সাগরে দূষণের উৎস তৈরি হতে পারে। কৃষি, মাছ চাষ, নতুন প্রজাতির প্রচলন এবং সার-অষুধের মাধ্যমে প্রকৃতিতে বাড়তি পুষ্টিপদার্থের যোগান দিয়ে উপসাগরের জীববিদ্যা নেতিবাচকভাবে পাল্টে দিতে পারে মানুষ।
ঙ. প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এবং জমিন কী-ভাবে ও কী-কাজে ব্যবহার করা হবে সেইসব সিদ্ধান্তের ফলশ্রুতিতে বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় অঞ্চলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূল, সৈকত ও নদ-নদীর গায়ে-গতরে মানুষ যদি পরিবর্তন আনে তবে তাতে করে ভাঙ্গন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ও দরিয়া-পৃষ্ঠের উচ্চ বৃদ্ধি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
চ. বঙ্গোপসাগরের সম্পদ আজ ও আগামীতে অবিরাম পাইতে হলে, লোকেদের অবশ্যই এমনসব উপায়ে নিজেদের জীবন কাটাইতে হবে যাতে এই দরিয়া টিকে থাকে দরিয়ার মতন। সবার উপকারের জন্য দক্ষভাবে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা করতে হলে সবারই নিজের মত করে একলা এবং সম্মিলিতভাবে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
সংস্করণ: জানুয়ারি ২০১৯