২. আজকের এই বঙ্গোপসাগর প্রকৃতির বেশুমার ভাঙ্গাগড়ার ফল
মৌলিক ধারনাগুলা
ক. বঙ্গোপসাগর এবং এর পলিগঠিত বেসিনের গঠন শুরু হয় ক্রেটাসিয়াস আমলের (প্রায় বারো কোটি বছর আগে) শুরুর দিকে, যখন এন্টার্টিকা মহাদেশের জমিন ইনডিয়ার থেকে আলাদা হয়ে দক্ষিণে সরে যাচ্ছিল। বর্তমানের ইনডিয়ার রাজমহল ও বাংলাদেশের সিলেট আগ্নেয়-অঞ্চলের মাঝখান থেকে দক্ষিণ-পুবে সমুদ্র-গর্ভ বিস্তার শুরু হয় তখন। প্যালোসিন আমলে (প্রায় ছয় কোটি বছর আগে) প্রাচীন ভারতের টেকটোনিক প্লেট উত্তরে ইওরোশিয়ান প্লেটের সাথে সংঘর্ষ করে এবং উত্তরে সরে আসতে থাকে; দুই প্লেটের মাঝখানে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হিমালয় পর্বত মাথা তুলে দাঁড়ায়। দুনিয়ায় সাধারণত মহাসাগর-মহাদেশের সীমানা সাগরের নীচে অবস্থিত হয়, কিন্তু বঙ্গোপসাগরের বেলায় এটি বর্তমানে উপকূলের কয়েকশ কিলোমিটার ভেতরের দিকে বর্তমান বাংলাদেশের নিচে অবস্থিত। কারণ, পরবর্তীতে হিমালয় পর্বত মাথায় তুলে দাঁড়ানোর সময় বিপুল পলি এই অঞ্চলকে ঢেকে দেয়।
খ. হিমালয় থেকে সাগরে পলি আসবার পরিমাণ বাড়ছেই; বাংলার ব-দ্বীপে এখনো ভাঙা-গড়া চলছে, পলি বর্তমানে দূরের গভীর দরিয়ায়ও ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে প্রায় সারা উপসাগরের তলদেশ এক বিপুল সমভূমি, যার মধ্যে অনেক জায়গায় সাগরতলের উপত্যকারা ছেদ করে গেছে। উপসাগরের তলদেশ একটি চওড়ামুখো ইংরেজি ‘ইউ’ অক্ষরের মতো যেটি আস্তে আস্তে ঢালুমুখ হয়ে ইনডিয়ার মহাসাগরের সাথে মিশেছে।
গ. দরিয়া-পৃষ্ঠের পরিবর্তন, ঢেউ, এবং আবহাওয়ার নানা-রকম ঘটনার মধ্যে উপকূলীয় এলাকা বদলে যেতে থাকে।
ঘ. বাতাস, ঢেউ, ও স্রোতের কারণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভাঙ্গন হয়; এতে করে পলির স্থানান্তর ঘটে।
ঙ. হিমালয় থেকে পলি আসে, এবং ভাঙনের থেকেও পলি হয়, পলিতে আছে নানা প্রাণি, উদ্ভিদ, গাছপালা, পাথর ও খনিজ পদার্থের কণা। বঙ্গোপসাগরে প্রধানত পলি বয়ে নিয়ে আসে নদীরা, যেগুলোর উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশে এবং হিমালয় পর্বতমালায়।
চ. দুনিয়ার দরিয়ামন্ডলে বঙ্গোপসাগর সবচেয়ে বড় উপসাগর। বঙ্গোপসাগর ও মহাদেশীয় সীমানার ওপরে হিমালায়ের পলি এবং গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীরা তৈরি করেছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব-দ্বীপ; বাংলার ব-দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের তলদেশে তৈরি হয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সাবমেরিন-ফ্যান, বাংলার ফ্যান নাম যার।
সংস্করণ: জানুয়ারি ২০১৯