১. ভারত মহাসাগরের উত্তরপুবের অগভীর দরিয়া বঙ্গোপসাগর; দুনিয়ার দরিয়ামন্ডলের সাথে যুক্ত এই উপসাগর
মৌলিক ধারনাগুলা
ক. দক্ষিণ এশিয়ায় প্রধানতম ভৌগোলিক উপাদান হচ্ছে বঙ্গোপসাগর; এই উপসাগরের পাড়ে আছে বাংলাদেশ, ইনডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, শ্রিলংকা ও থাইল্যান্ড।
খ. বঙ্গোপসাগরের দরিয়ার বিরাট ইকোসিস্টেমের (Large Marine Ecosystem) আয়তন প্রায় ৩৫,৮৫,৪৪০ বর্গ কিলোমিটার; বঙ্গোপসাগর ছাড়াও এই বিরাট ইকোসিস্টেমে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে আন্দামান সাগর, মালাক্কা প্রণালি, এবং নদীগুলার মোহনা ও ছোট ছোট খাড়ি।
গ. নদীতে বয়ে আসা মিষ্টি পানিতে উপসাগরের চরিত্র প্রভাবিত হয়; উপসাগরটির অন্যতম বেসিন অঞ্চলটি হচ্ছে দুনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম জলাঞ্চল— গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদী দ্বারা প্রভাবিত। এই বেসিন এলাকাটি বঙ্গোপসাগরে যেই পরিমাণ পলি খালাস করে তা একক হিসাবে দুনিয়ায় সর্বোচ্চ। পলি ও মিষ্টি পানির কারণে উপকূলের কাছাকাছি উপসাগরে পানির লবণাক্ততা কম থাকে।
ঘ. বঙ্গোপসাগরের দরিয়ার বিরাট ইকোসিস্টেম (Large Marine Ecosystem), বেসিন এলাকা, নদ-নদী এবং পুরা দুনিয়ার দরিয়া; এই সবই পরস্পরের সাথে যুক্ত। বেসিন এলাকা থেকে পুষ্টিকণা, দ্রবীভূত গ্যাস, খনিজ, পলি, এবং দূষণকারী পদার্থ ইত্যাদি বয়ে উপসাগরে নিয়ে আসে নদীরা। বঙ্গোপসাগরকে দুনিয়ার মধ্যে একটা খুবই বেশি উৎপাদনশীল ইকোসিস্টেম (প্রথম শ্রেণি) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নদী থেকে বয়ে আসা পুষ্টি উপাদানের কারণে এত উৎপাদনশীলতা।
ঙ. দুনিয়ার জলচক্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ বঙ্গোপসাগর। উপসাগরটি দক্ষিণ এশিয়ার বেসিন এলাকাগুলোর সাথে, যেমন ইরাবতী, গঙ্গা-মেঘনা-ব্রহ্মপুত্র, মহানদী, গোদাভরি, কৃষ্ণা ও কাবেরি নদী-সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত। নদীসহ পানির এই সিস্টেমগুলোতে কোনো পরিবর্তন এলে তা পানির গুণাগুণ, পরিমাণ এবং জমিনের নিচে জল সঞ্চিত থাকার সময়সহ জলের সার্বিক পরিচালন প্রভাবিত করে।
চ. বাতাস, ঢেউ, সূর্যের শক্তি-তাপ এবং জলের ঘনত্বের ভিন্নতার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে জলস্রোতের সঞ্চালন হয়। বিষুবরেখার কাছে উপসাগরটির ভৌগোলিক অবস্থান, উপকূলের অবতল আকৃতি, মহাদেশীয় ঢাল ও তলদেশের আকার, হাওয়া-প্রবাহের গতিমুখ, উপকূলরেখা এবং উপকূলরেখায় থাকা অবকাঠামো ইত্যাদি জলস্রোতের গতিপথ প্রভাবিত করে।
ছ. জোয়ারভাটার কারণে হওয়া বেশকমের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার পর জমিনের তুলনায় বঙ্গোপসাগরের গড়-উচ্চতাই সাগরপৃষ্ঠ। বাষ্পীভবন, নিষ্কাশিত পানি, বায়ুপ্রবাহ ও ঢেউয়ের ভিন্নতার কারণে সাগরপৃষ্ঠের পরিবর্তন হয়। মৌসুমের ভেদে বঙ্গোপসাগর পৃষ্ঠের উচ্চতার যেই মাত্রায় রকমফের হয় তা দুনিয়ায় সাগরপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ ভিন্নতাগুলোর একটা।
জ. ওপর-নীচ গতিমুখে জলস্রোতের সঞ্চালনকে আপওয়েলিং ও ডাউনওয়েলিং বলা হয়, এটা বঙ্গোপসাগরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তলার পানি উপরিতলায় আসে এবং উপরিতলার পানি নিচে যায়। মৌসুমি হাওয়ার প্রভাবে এমনটা হয় বলে আপওয়েলিং-ডাউনওয়েলিংও ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে ঘটে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই দরিয়ার গভীরে অক্সিজেন ও পুষ্টির কমতিতে থাকা পানি উপরিভাগের বেশি অক্সিজেন ও পুষ্টি সমৃদ্ধ পানির সাথে মিশতে পারে।
ঝ. যদিও বঙ্গোপসাগর বিরাট, কিন্তু দুনিয়ার পুরা দরিয়ার মতন এর একটা শেষ আছে এবং এর সম্পদও সীমিত।
সংস্করণ: জানুয়ারি ২০১৯